হামিদুল আলম সখা
অনিক কদিন তাবৎ ভাবছে।বাবা যে চাকরি করতো করোনা ভাইরাস এর সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কয়েক মাস খুবই সমস্যার মধ্যে চলতে হয়েছে অনিক এর বাবার।অনিকের বাবা মোজাম্মেল হক এর উপর শ্রেণির বন্ধু অনেক।সেই সুবাদেই আর একটি প্রতিষ্ঠানে তিন মাস পরই চাকরি হয়ে গেছে। তারপরও হিমশিম খেতে হচ্ছে ।বাজার মূল্যের সাথে দৌড়ে পারছে না।অনিক বাবার বড় ছেলে।ওর ছোট দুটি ভাই বোন রয়েছে।তিন জনের লেখাপড়া খরচ অনেক।অনিকের নানা মাঝে মধ্যে ওর মাকে সহযোগিতা করে।অনিকের বাবা মোজাম্মেল কখনো কিছুই জানতো না।ছেলে মেয়ের অতিরিক্ত হাতখরচ অনিকের মা বেনু দিত।মায়ের প্রতি ছেলে মেয়েরা খুব সন্তুষ্ট।
অফিস থেকে ফিরে মোজাম্মেল সাহেব নিজের ঘরে চুপ করে বসে ছিলেন। কিন্তু বেনুর ব্যাপারটি ভালো ঠেকছিলো না।স্বামীর পাশে এসে বেনু বললো,কি গো, কি চিন্তা করছো?
মোজাম্মেল সাহেব গুরুগম্ভীর ভাবে বেনুর দিকে তাকিয়ে বললো, আর তো পারছি না।আর্থিক কস্ট এমনভাবে অক্টোপাসের মতো আমাদের জড়িয়ে ধরবে কখনো ভাবিনি।সামনে ঈদ।এবার কোরবানি দিতে পারবো না। কোরবানি তো ঋণ করে হয় না।
বেনু বললো,তা ঠিক।এবার না হয় আমরা কোরবানি দেবো না।আমি সামলে নিবো। তুমি চিন্তা করো না।
২.
বড় ছেলে অনিক সবকিছু বুঝতে পারে।বাবার আর্থিক অবস্থার চিন্তা করে দুটি টিউশনি জোগাড় করেছে।নিজের খরচ চালিয়ে ছোট ভাই বোনদের সাহায্য করে। টিএসসির মাঠে বসে ভাবছে।
অনিক ভাবছে শুধু কি ওদেরই এই অবস্থা? নাকি নিম্ন মধ্যবিত্ত সবার? সেদিন ক্লাসের অফ টাইমে ওরা মল এ বসে আড্ডা দিচ্ছিল।অবশ্য মেয়ে বন্ধু কেউ ছিল না।তাই সবাই খোলামেলা কথা বলছিল।এতদিন একজন অন্যজনকে ফাঁকি দিচ্ছিল।আজ তো চিচিং ফাঁক।সুমন বললো তোরা তো জানিস, বাবা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যাবার পর মা সংসারের হাল ধরে।মায়ের কস্ট হয়েছে অনেক।আমি একটা চাকরি পেলে মায়ের কস্ট দূর হবে।
তাই সবাই মন খুলে কথা বলছে।কুদ্দুস খুব চুপচাপ থাকে।ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে কেউ তেমন কিছু জানে না।কুদ্দুস এর বাবা মা কেউ নেই।আছে শুধু ওর একমাত্র বোন।ছোট চাচার কাছেই ওরা বড় হয়েছে।তবে চাচি চাচার মতো নয়।নিজের ছেলে মেয়ের মতো ওদের দেখে না। বিশেষ করে খাবার দাবার দেয়ার সময় বৈষম্য দেখা যায়।সবার খাওয়া হলে ওদের দেয়। কুদ্দুস ইচ্ছা করেই খাবার এর সময় পেরিয়ে গেলে বাসায় আসে।আর বোনটাকে বানিয়ে রেখেছে কাজের বুয়া।এ কথাটি বলার সাথে সাথে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো কুদ্দুস।সবার চোখে জল।এখনো এমন মানুষ দেখা যায়?
অনিক ভাবে, তাহলে আমার কস্ট তো কোন কস্টই না। আবহাওয়া চেঞ্জ করার জন্য কিসমত বলে উঠলো , আবে হালায় হগলতে চুপ হইয়া গেলা ক্যা? আমি বি আমার কথা কমু না।আমাগো হগলের কস্ট আছে। একদিন আমাগো কস্ট থাকবো না।চল উঠি।চা খামু।
ভোরের আলো বার বার চোখে লাগছে।জানালার পর্দা বাতাসে উড়ছে।অনিক চোখ বন্ধ করে রয়েছে। কিছু একটা স্বপ্ন দেখছিল।মনে করার চেষ্টা করছে।বাবা সন্ধ্যা বেলায় একটি খাসি কিনে এনেছে। কোরবানি না দিলে ছেলেমেয়েদের মন খারাপ হয়ে যাবে।ছেলে মেয়ের খুশি মা বাবার খুশি।খাসিটা ওরা সবাই দেখছে।অনিক খাসির কাছেই বসা ছিল। হঠাৎ খাসিটা অনিককে গুঁতা দিলো।অনিক ব্যাথায় উহ করে উঠলো।ঘুমটা ভেঙে গেল।সূর্যের আলো খুব বিরক্ত করছে।বাতাসে জানালার পর্দা টা বার বার সরে যাচ্ছে।অনিক খুব বিরক্ত হচ্ছে।