বিনোদন ডেস্ক: খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন। ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সে ক্ষোভ ও আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন গুণী এ নির্মাতা।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফারুকী। ফেসবুকে পোস্ট করা দীর্ঘ লেখা পোস্ট করে তিনি জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ আতঙ্কে রয়েছে তিনি।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশের অবস্থা এখন ‘গরম তাওয়া’-র মতো। যে তাওয়ার ওপর দেশের জনগণ বসে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরে দেশ ও জনগণের হাল কী হবে সে নিয়ে উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করেছেন ফারুকী।
‘আমরা মোটামুটি উত্তপ্ত তাওয়ার ওপর বসে আছি। অনেকেই যেতে আসতে তাওয়ার নিচের আগুনে তুশ ছুঁড়ে দিচ্ছে, কেউবা দিচ্ছে ঘি। সামনের ডিসেম্বর আসতে আসতে এই তাওয়ার অবস্থা কি হয়- এই নিয়া বড় আতংকে আছি। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই এইরকম একটা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন।
এ উৎকণ্ঠা একমাত্র দূর করতে পারতো আমাদের দুরদর্শিতা, আমাদের দিলের রহম, আর সহাবস্থানে ইচ্ছুক মন। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সকল কমিটিই নির্মূল কমিটি। আমাদের সকল আদর্শই অপর আদর্শকে বিনাশ করার মধ্যেই নিজের গৌরব খুঁজে পায়!
এখানে যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা ক্ষমতার বাইরের দলকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়! এবং এটা পালাক্রমে চলতেই থাকে, মাত্রার তারতম্য থাকে শুধু। এই নিশ্চিহ্ন করার বাসনা ব্যক্তিজীবনেরও এত গভীরে চলে যায় যে, শাহরিয়ার কবিরকে না চেনার অপরাধে সাফা কবিরকে দেশের বাইরে পাঠাইয়া দিতে মন চায় আমাদের। যেন কিম জং উনকে না চেনার অপরাধে বসা এক কোর্ট মার্শাল। আমাকেও এরকম বহু মব ট্রায়ালে পাকিস্তানে পাঠাইয়া দেয়া হইছে। কোনো কোনো ট্রায়ালে ভারতে পাঠাইয়া দেয়া হইছে।
২০১৪ বা ১৫ সালের দিকে একটা লেখায় লিখছিলাম, এই দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একটা বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের পক্ষে বিএনপি সমর্থক কোটি কোটি মানুষকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া সম্ভব না। বিএনপির পক্ষেও তা সম্ভব না। এমনকি জামায়াতে ইসলামী প্রায় দশ বছর প্রবল চাপের মুখে থেকেও সেদিন সমাবেশে দেখিয়েছে, আপনি চাইলেই কোনো একটা আদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের মুছে দিতে পারেন না। বরং এই চেষ্টায় আখেরে যেটা হয় সেটা হলো আমাদের কালেকটিভ শক্তির ক্ষয়! জাতির প্রাণ শক্তি ক্ষয় হয়।
আমরা তো অনেক কিছুই ছেড়ে আসছি। উন্মুক্ত স্থানে টয়লেট করা বাদ দিছি। এনালগ ফোনের জায়গায় মোবাইল টেপা শিখছি। এক সাথে থাকাটা কেন শিখতে পারব না? কেন এটা বুঝতে চাইব না সবাই আমার মতো একই দল করবে না, একই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হবে না, সবাই একই রকম খাবার খাবে না, একইভাবে ভালোবাসবে না? কেন এটা বুঝতে চাইবো না, যার যার স্টেক নিয়ে সমাজের সব পক্ষই পাশাপাশি থাকবে? তর্ক হবে, বিতর্ক হবে, কিন্তু নির্মূলের ব্যর্থ চেষ্টা হবে না।
সময় এসেছে সকল নির্মূল কমিটির দোকান বন্ধ করে দেয়ার।