চিত্ত আর বিত্ত যার আছে তারাই করে লায়নইজম

__________ হালিমা বেগম

মেলভিন জোন্স নামের এক বীমা কর্মকর্তা তার কয়েক জন সমমনা বন্ধু নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন, আড্ডা দিতে দিতে এক পর্যায় আলোচনার বিষয় হলো আমরা পারি আমাদের বিত্তের একটা অংশ দুঃখি গরীব দুঃস্থ ঘর বাড়িহীন মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিতে । কথাটা শুনে সবারই ভালো লাগলো। মহান মেলভিন জোন্সই সমমনা বন্ধুদের নিয়ে ১৯১৭সালের ৭জুন আমেরিকার চিকাগো শহরে আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব বর্তমানে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেন। আমেরিকানরা এক সময় বলতেন, “তাদের সূর্য্য অস্তমিত হয় না ” আজ আমরা লায়নইজমরা বলতে পারি, “লায়ন সাম্রাজ্যে সেবার সূর্য্য অস্তমিত হয় না “। বর্তমান বিশ্বে ২১০টি দেশে ৪৬৬৫৪টি ক্লাব ৮৮৪ কি জেলার আওতায় প্রায় ১৪ লাক্ষ লায়ন্স সদস্য সেবার কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন, যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চিত্ত আর বিত্ত যার আছে তারাই করে লায়নইজম। সমাজের সবাই লায়ন ইজম করে না। একটা বিশেষ শ্রেণীর মানুষ লায়ন্স করে। লায়ন্স থেকে কিছু নেয় না ,সর্বদা দিতে হয় , আর এই মানসিকতার লোকরাই লায়নইজম করেন । লায়ন্স এমন একটা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে সমাজের অসহায় দুঃস্থ মানুষের সেবা দেয়া হয়।সংগঠনের মূল কাজই হলো আর্তমানবতার সেবা । বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল নিশ্চয়ই আপনাদের চোখে পড়েছে। অনেক বড় আকারে আগারগাঁও আছে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল। দেখে না থাকলে , দেখে নিবেন। বিনা টাকায় গরীবের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। অসহায় গরীব মেয়েদেরকে সেলাই মেশিন দেয়া হয়। এতিম বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয় । জামা কাপড় দেয়া হয় ,রমজানে বিভিন্ন জায়গায় ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় গরীব দুঃখিদের জন্য শীতের কন্বল ও শীতের কাপড় দেয়া হয়। পঙ্গুদেরকে হুইল চেয়ার দেয়া হয়। গরীবের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়ে থাকে ।

লায়ন সদস্যরা বার্ষিক চাঁদা মাত্র সাত হাজার টাকা দিতে হয়। আর সেবামূলক কাজের জন্য বাধ্য বাধ্যকতা নেই, যে এতো টাকা দিতে হবে । যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী এক লাখ দুই লাখ পাঁচ লাখ অর্থাৎ যে যেমন দিতে চায় তেমনই দিয়ে দুঃস্থদের সেবা করে থাকে। কারো উপর কোন বল প্রয়োগ করা হয় না । ধনীর কাছে গরীবের হক আছে,একথা মুসলমানেরা জানেন। সব ধর্মেই মানব সেবার কথা বলে।

দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা লায়নরা কাজ করে থাকে। আমরা যখন কাজ করি তখন প্রশ্চাত্যের দেশের লোকেরা ঘুমায়, আবার আমরা যখন ঘুমাই তখন তাঁরা কাজ করেন। এই ভাবে চব্বিশ ঘণ্টা মানুষের সেবায় এই সংগঠন কাজ করে থাকে ।।

কোন বিষয়ে ভাল ভাবে না জেনে না বুঝে মন গড়া কিছু বলা, আমার মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমাদের সমাজে অনেকে এখনো লায়ন্স সম্পর্কে ভালো ভাবে জানেন না। তাই না জেনে অনেকে বাজে মন্তব্য করে ফেলেন । সিনিয়র দুই জন মানুষ লায়ন্স সম্পর্কে যে সব নোংরা মন্তব্য করলেন, আমি শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম । শুনেছি। উনাদের বলা শেষ হওয়ার পর আমি বললাম কিছু বলতে চাই, লায়ন সম্পর্কে, তখন এক জন আমাকে থামিয়ে দিলেন,এই বলে ,উনি জানেন,উনি লায়ন্স করেছেন । আমার কাছ থেকে কি শুনবেন । লায়ন্স করে নাকি অনেকে বাড়ি গাড়ির মালিক হন । এমন অনভিজ্ঞ বোকা বোকা কথা শুনে আমার হাসি পাচ্ছিল।

বরং যাদের গাড়ি বাড়ি আছে তারাই লায়ন্স করেন। লায়ন্স করে কেউ বাড়ি গাড়ি মালিক হয় না । এই ধরনের ভুল ম্যাসেজ দেয়ার কোন যুক্তি নেই। আগে জানতে হয়, বুঝতে হয়,তারপর বলতে হয়।
বর্তমানে লায়ন্স এমন একটা দিনের অপেক্ষায় আছে ছিন্নমূল মানুষেরা তাদের নীড় পাবে, রোগাক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা অভাবে মরবে না, অসহায় দুঃস্থের মুখে হাসি ফুটবে, অন্ধদের চোখে আলো ফুটবে নিশ্চিত।
১৮৭৯ সনের ১৩ জানুয়ারী আমেরিকার পোর্ট থমাস এরিজোনা শহরে যে মহান মানুষটি জন্মে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনের ঘরে, তার জন্য আমরা লায়নইজমরা লায়ন সদস্য হিসেবে গর্বিত। এই মহান মানব মেলভিন জোন্স এর জন্য গভীর শ্রদ্ধা জানাই। উনার আত্নার শান্তি কামনা করি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *