চীনের আধিপত্য ঠেকাতে কোন পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:মধ্যপ্রাচ্যে ব্যর্থ হয়ে এবার চীনের আধিপত্য ঠেকাতে ভিন্নপথে হাটছে যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ের হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে তাইওয়ানের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য চুক্তি সই এবং জাপানের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ঘোষণা, উল্টো তাইপে ও টোকিওকে বেকায়দায় ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। চীন যুক্তরাষ্ট্রের এমন কর্মকাণ্ডের পাল্টা জবাব দিতে শুরু করলে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

পশ্চিমা বিশ্বসহ মধ্যপ্রাচ্যে দিনদিন আধিপত্য কমছে যুক্তরাষ্ট্রের। ঠিক এর উল্টো অবস্থানে চীন। একের পর এক অঞ্চলে নতুন করে ঘাঁটি গাড়ছে তারা।

এ অবস্হায় নতুন মোড়লের খেতাব পাওয়া বেইজিংকে ঠেকাতে এবার দেশটির আশপাশের দেশগুলোকে নিয়ে খেলতে তৎপর ওয়াশিংটন। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি থেকে শুরু করে রয়েছে প্রতিরক্ষাখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগও।
 
সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জাপান সফরে প্রতিরক্ষাখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন দুই দেশ। উত্তর কোরিয়ার হুমকি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।

শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তিবাদী নিরাপত্তা নীতি অনুসরণ করা টোকিও সম্প্রতি প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছে। যা অবাক করার মতো বিষয়। এতে দেশটির খরচ হবে ৩২ হাজার কোটি ডলার।
 
এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেটের দেশ হতে যাচ্ছে জাপান। এতো বছর ধরে শান্তিবাদী ও যুদ্ধবিরোধী ইমেজের দেশটি কেন উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করলো?
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উন্নত দেশটিকে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা এ উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুণ।
 
গত আগস্টে তাইওয়ানের আশপাশের জলসীমায় সামরিক মহড়া চালানোর সময় চীন যে নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল তার মধ্যে পাঁচটি গিয়ে পড়ে জাপানের সংরক্ষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে। স্বাভাবিকভাবেই তাইপের নিরাপত্তাকেও নিজেদের ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে টোকিও।
 
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব বাড়ানো গেলে দেশটির কাছ থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার পাশাপাশি নিজস্ব হাইপারসনিক অস্ত্রের ভাণ্ডার বাড়াতে সক্ষম হবে দেশটি।
 
এই যখন অবস্থা, তখন চীনের সব ধরনের হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে তাইওয়ানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যচুক্তি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ চুক্তির ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের পণ্য রপ্তানি বাড়বে। চুক্তির প্রথম অংশ এরইমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি চীনের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করতে তাইওয়ান আরও বেশি সক্ষম হবে।
 
তবে এরইমধ্যে চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর দাঁতভাঙা জবাবের হুমকি দিয়েছে বেইজিং। একই সঙ্গে, বাণিজ্য চুক্তির নামে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বন্ধে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে তারা।
 
বিশ্লেষকদের মতে, এতোসব হুমকির পরও তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা এবং তাইপেকে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা দেয়ার অঙ্গীকার থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বেইজিং। 
 
শুধু তাই নয়, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন ও মার্কিন স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সাম্প্রতিক বৈঠক এবং গেল বছর তৎকালীন মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির যুক্তরাষ্ট্র সফরের জেরে তাইওয়ানের চারপাশে চীনের বিশাল সামরিক উপস্থিতির পাল্টা জবাব ওয়াশিংটন-তাইপে বাণিজ্য চুক্তি।
 
এ অবস্হায় চীন নিজের ভূখণ্ডের আশপাশে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের পাল্টা জবাব দিতে শুরু করলে বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে ওই অঞ্চল। অনেকেই মনে করে, চীনবিরোধী বলয় তৈরি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জাপান ও তাইওয়ানকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *