হামিদুল আলম সখা
১.
সেলিম তার ছেলেকে নিয়ে মসজিদে এসেছে।ঈদের জামাত পড়বে।বাসা থেকে অজু করে এসেছে।ছেলে শান্তর বয়স ছয় বছর।স্কুলে দিয়েছে। বাসায় কাছেই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১ম শ্রেণিতে পড়ে।শান্ত আসলেই শান্ত।সে তার বাবা মাকে খুব ভালোবাসে। কোরবানির ঈদ তাই সকাল সাতটায় নামাজ।নামাজ শেষে ফেরার পথে বাবার সাথে বলতে বলতে আসে “আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর,লা ইলাহা ইল্লালাহু ,আল্লাহু আকবর,আল্লাহু আকবর ওয়া ইল্লাহে হাম।” মসজিদের হুজুর বলে দিয়েছেন।এটা পাঠ করলে অনেক ছওয়াব পাওয়া যাবে।
বাসায় ফিরে জরিনাকে বললো ১২টার সময় তৈরি থাকবা।মালিকের বাসায় দুপুরের দাওয়াত।আমি ,তুমি আর শান্ত যাবো।এখন দেও কিছু খাইতে।জরিনা খিচুরি রান্না করেছে।সাথে ডিম ভাজা।জরিনা দুইটা ডিম একসাথে ভাজি করেছে।বড় অংশটি স্বামী সেলিম এর জন্য, মাঝের অংশটি ছেলের জন্য আর ছোট অংশটি নিজে খাবে। সেলিম এর চোখ এড়ায় না।বললো, জরিনা তোমার ডিম এতো ছোট কেন? জরিনা বলে,শান্তর বাবা আপনি তো জানেন বেশী ডিম খাইলে আমার গ্যাস হয়। ও আচ্ছা।তিনজনে নিরবে খিচুরি খায়। সেলিম মালিকের বাসায় চলে যায়।গরু জবাই হবে।কসাই এর সাথে সহযোগিতা করতে হবে।ছেলে শান্তকে বলে বাবা আমি আইয়্যা তোমাগো নিয়া যামু।
২.
সেলিম মালিকের বাসায় গিয়ে দেখে গরু জবাই হয়ে গেছে।মালিক বোরহান সাহেবের পড়নে সাদা ধবধবে পান্জাবি ও পায়জামা। সেলিম ছালাম দিলো।
কি সেলিম মিয়া দেরী কইরা ফালাইছ। তাড়াতাড়ি কামে লাইগ্যা যাও। সেলিম মিয়া কসাইদের সাথে কাজে লেগে যায়।প্রায় দুই ঘন্টা লেগে যায়।সমস্ত মাংস বাসায় নিয়ে যায়।বোরহান সাহেব নিজে মাংস ভাগ করে। সেলিম মিয়া সহযোগিতা করে।মাংস ভাগাভাগি শেষ হলে গিন্নি মা বলে সেলিম মিয়া, তোমার বউ বাচ্চারে দুপুরে নিয়ে আসবা।ঈদের দিন দাওয়াত খাবা। সেলিম মাথা নেড়ে চলে যায়।
সেলিমের বাসা কাছেই একটি বস্তিতে।মিয়া বাড়ির বস্তি বললে সবাই চিনে।গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর এই বস্তিতে উঠেছিল।তারপর সেলিম মিয়া রিক্সা চালিয়ে সংসার চালিয়েছে।এরপর সিএনজি চালানো শিখে সিএনজি চালিয়েছে। এরপর তাদের ঘরে আসে শান্ত।পোয়াতি বউকে অনেক সেবা দিয়েছে সেলিম মিয়া।
একদিন বোরহান সাহেব সেলিমের সিএনজিতে উঠেছিল।ভাড়া দেয়ার সময় বোরহান সাহেব সেলিমের খোঁজ খবর নেন। সেলিকে বোরহান সাহেবের ভালো লাগে। বোরহান সাহেব বলে তুমি প্রাইভেট চালাতে পারবা?
জি, সময় লাগবো।
তা হলে তুমি আগামি মাসে আসবা।এই শুরু হলো।বোরহান সাহেবের প্রাইভেট গাড়ি চালায়। সেলিমের ছেলে হওয়ার পর খরচ বেড়ে যায়।মাঝে মাঝে সংসার চালাতে হিমশিম খায়। বোরহান সাহেব সাহায্য করে।কিন্তু গিন্নি মা খুব কড়া । সহজে কিছু দিতে চায় না।
৩.
সেলিম মিয়া মিয়া বাড়ির বস্তি থেকে বের হয়ে রিক্সা নেয়। ঈদের দিন বলে কথা। মালিকের বাড়ি দাওয়াত খেতে যাবে।বাড়ির সামনে রিক্সা থেকে নেমে পকেট গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। দারোয়ান রমিজ বলে ,কি সেলিম ভাই সায়েবের বাইত দাওয়াত খাইতে আইছুইন?ভাবিসাব না?স্লামালাইকুম ভাবি।
সেলিম উত্তর দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় উঠে।কলিং বেল টিপতেই গিন্নি মা দরজা খোলে। সেলিম মিয়া আইছো? সেলিমের বউ গিন্নি মাকে ছালাম করে।গিন্নি মার সাথে সেলিমের বউ ভিতরে চলে যায়।গিন্নি মা সেলিমের বউকে নিয়ে রান্না ঘরে যায়।
কি সেলিমের বউ ভালাই হইছে তুমি আইছো।কামের বুয়া এখনো আহে নাই।বাসনগুলা মাইজ্যা দেও। সেলিমের বউ নিরবে বাসন পরিস্কার করে দেয়।ছেলে শান্ত ছোট মানুষ।এ ঘর থেকে সে ঘরে যায়।একসময় শান্তর নজরে পড়ে ওর মা রান্না ঘরে বাসন মাজে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে।
একটু পরে ড্রইং রুমের মেঝেতে খাবার দেয় গিন্নি মা।ওরা তিনজনই নিরবে দাওয়াত খেয়ে যায়।শান্ত দেখেছে ডাইনিং টেবিল ফাঁকা।
খাওয়া শেষে সেলিম তার পরিবার নিয়ে বস্তির বাসায় চলে আসে।ঘরে ঢুকেই ছেলে শান্ত বাবাকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা বাবা তোমার মালিকের বাসায় আজকা আমাদের দাওয়াত আছিলো। তাইলে আমগরে নিচে বসাইয়া খাওয়াইলো ক্যা?
এরই নাম কি দাওয়াত? সেলিম ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো।
#
সদস্য
বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ
কেন্দ্রীয় কমিটি।
সাধারণ সম্পাদক
ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার ক্লাব বাংলাদেশ।