নিউজ ডেস্ক: বরগুনায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামে একধরনের ভাইসারজনিত ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়েছে জেলার ৪০ ভাগ গরু। এরই মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে পাঁচ শতাধিক গরু। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদুল আজহায় জেলায় কোরবানির গরুর সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভ্যাকসিন না থাকায় এ রোগ প্রতিরোধে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে প্রথমে ফোসকা পড়ে ফুলে উঠে চামড়া। এরপর ফোসকা থেকে বের হয় পুঁজ। এ অবস্থায় কোরবানির উদ্দেশ্যে গরু লালনপালন করে লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন তারা। গরুর চিকিৎসার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন তারা।
খামারিরা জানান, জেলার অধিকাংশ গরু এখন এ রোগে আক্রান্ত। এতে কোরবানিতে গরু সংকটের কারণে বাড়বে গরুর দাম। এদিকে গরুর এ রোগ মহামারি আকার ধারণ করায় খামারিরা সুস্থ গরু বাজারে নিচ্ছেন না। তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন খামারেই গরু বিক্রি করতে। এতে বাজারের গরুর পরিমাণ কমেছে।
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের খামারি মোতালেব বলেন, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামের রোগে আমার একটি গরু মারা গেছে। এখন আরেকটি গরুর অবস্থাও সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় কোরবানির জন্য গরু লালনপালন করে আমার প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হয়েছে।’
সদর উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া গ্রামের খামারি আকলিমা বেগম বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে পুরো গ্রামে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার এমন কোনো গরু নেই যাতে এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। এরই মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গ্রামে অর্ধশতাধিক গরু মারা গেছে।’
সদর উপজেলা হাজারবিঘা এলাকার খামারি শাকিল আরমান বলেন, ‘আমার খামারে ১৫টি কোরবানির গরু আছে। ছোঁয়াচে লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামের রোগের কারণে গরু বাজারে নিতে পারছি না। এ কারণে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছি না। এ অবস্থায় গরু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’
বরগুনা পৌর গরু বাজারের ইজারাদার আমিনুল বলেন, ‘কোরবানি ঘনিয়ে এলেও প্রতিবছরের তুলনায় এ বছর বাজারে গরু কম উঠছে। এ কারণে গরুর দাম বেশি। সংক্রামক লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামের রোগের কারণে খামারিরা গরু বাজারে আনছেন না। তাই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় কোরবানির জন্য ৩৫ হাজার গরুর চাহিদা রয়েছে। জেলায় কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ৩৬ হাজার। চাহিদার তুলনায় বেশি গরু থাকা সত্ত্বেও রোগের কারণে দুই হাজার গরুর সংকট দেখা দিতে পারে। এতে গরুর দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এ রোগের কারণে খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বরগুনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভ্যাকসিন না থাকায় এ রোগ প্রতিরোধে বেগ পেতে হচ্ছে। কোরবানির হাটে যাতে রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে কেউ না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি। জেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি কোরবানির গরু থাকার পরও লাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে সংকট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে এ রোগের কারণে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’