সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি করলা ৮০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, টমেটো ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি পুঁইশাক ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, আলু ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ ও শসা ৪০ ও লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমতির দিকে। সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম আরও কমবে।
সজীব মিয়া নামে এক বিক্রেতা বলেন, আড়তগুলোতে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। এতে দাম কমছে। ফলে খুচরা পর্যায়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বিক্রেতারা দাম কমার সুখবর দিলেও ক্রেতাদের কণ্ঠে ভিন্ন সুর। তাদের দাবি, হাতে গোনা কয়েকটি সবজির দাম কমলেও বাড়তি বেশির ভাগ সবজির দাম।
সুমন নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। কাঁচা মরিচ ও টমেটোর দাম অনেক বেশি। তবে দাম কমেছে দু-একটি সবজির। বাকিগুলোর দাম এখনও চড়া।
নাফিস নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বেশ কিছু সবজির দাম কমেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বাজারে। তবে দাম আরও কমা উচিত।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে লাগামহীন কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে যেটি বিক্রি হয়েছিল ৪০০ টাকা কেজি।
স্বস্তির খবর মাংসের বাজারেও। নতুন করে বাড়েনি কোনো মাংসের দাম। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। আর বর্তমানে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে সরবরাহ বাড়ায় ও চাহিদা কিছুটা কম থাকায় মুরগির দাম বাড়েনি। ইকরামুল নামে এক বিক্রেতা বলেন, ঈদের পর থেকেই বাজারে মুরগির চাহিদা কমতির দিকে। পাশাপাশি বেড়েছে সরবরাহের পরিমাণ। এতে নতুন করে দাম বাড়েনি।
আর প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। হাকিম মোল্লা নামে এক বিক্রেতা বলেন, গত রোজার ঈদের পর থেকে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
দাম বাড়েনি মুরগির ডিমেরও। বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।
তবে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী রসুনের দাম। কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। আর আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে দেশি রসুনের সরবরাহ কম থাকায় ও বিদেশ থেকে রসুনের আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে রসুনের। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের বিক্রেতা সোবাহান বলেন, বাজারে দেশি রসুনের সরবারাহ নেই বললেই চলে। পাশাপাশি ভারত ও চীন থেকেও আমদানি কমেছে। এতে দাম বাড়ছে।
খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হলেও পাইকারি পর্যায়ে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। আর চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা।
আড়তদাররা জানান, পাইকারিতে কম দামে বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হলেই বেড়ে যায় পণ্যের দাম। কারণ, খুচরা পর্যায়ে নতুন করে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ যুক্ত হয়।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের জিলানী করপোরেশনের মালিক মো. আব্দুর রহিম জানান, আড়তে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। এর মধ্যে ফরিদপুরের রসুন ১৬০ টাকা ও নাটোরের রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকরা রসুন স্টক করায় বাজারে দেশি রসুনের সরবরাহ কিছুটা কম। এতে দাম কিছুটা বাড়তি।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের অজয় টেডার্সের মো. রতন বলেন, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে গেলে প্রতিটি পণ্যের দামই বাড়ে। শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের জন্য দাম বাড়ে। এ ছাড়া বাজারে রসুনের কিছুটা সরবরাহ ঘাটতিও রয়েছে।
এদিকে বাজারে কমতে শুরু করেছে আদা ও পেঁয়াজের দাম। মানভেদে প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কেজিতে দাম কমেছে ৫ টাকা পর্যন্ত।
বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি বাড়ায় ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকায় দাম কমছে। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ভাই ভাই বাণিজ্যালয়ের মালিক তাইজুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে। আড়তগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা পর্যন্ত। আর মানভেদে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা স্বপন জানান, আমদানি বেড়েছে পেঁয়াজের। এতে কমতে শুরু করেছে দাম। পাইকারিতে প্রতি ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। এতে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। আর প্রতি ৫ কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে ইলিশসহ হাতে গোনা কয়েকটি মাছের দাম কিছুটা বাড়লেও স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য মাছের দাম। সরেজমিন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর প্রতিকেজি টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
বাজারে প্রতিকেজি দেশি মাগুর ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার ৬০০ টাকা ও শোল ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রুই ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা, পাবদা ৭০০ থেকে ৮৫০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় বাজারে মাছের সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম বাড়েনি। নদী ও খাল-বিলের মাছ বাজারে উঠতে শুরু করলে দাম কমে যাবে।
স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। নতুন করে দাম বাড়েনি কোনো চালের। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাজারের সজীব রাইস এজেন্সির মালিক মো. সজিব বলেন, বাজারে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি মোটা স্বর্ণা ২ হাজার ২৫০ টাকা, চিকন স্বর্ণা ২ হাজার ৩৫০ টাকা, আটাশ ২ হাজার ৪৩০ থেকে ২ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সজিব আরও জানান, বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে চালের দাম। ভারত চাল রফতানি নিষিদ্ধ করলেও এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়বে না।
এদিকে বাজরে কিছুটা নিম্নমুখী ডাল, আটা ও ময়দার দাম। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৯ টাকায় বিক্রি হলেও খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে । প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, এরই মধ্যে নতুন দামের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বাজারে এসেছে। বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামেই। তবে খোলা সয়াবিন তেল মিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়তি।
এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় চলতি মাসের ১১ জুলাই দেশের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমিয়ে ১৭৯ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা কমিয়ে ১৫৯ টাকায় বিক্রির কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।