আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুলিশের গুলিতে এক তরুণ নিহতের ঘটনায় দেশব্যাপী বিক্ষোভের জেরে পূর্ব নির্ধারিত জার্মান সফর স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। শনিবার (১ জুলাই) জার্মানির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ২৩ বছরের মধ্যে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রথমবারের মতো রোববার (২ জুলাই) তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানিতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে পুলিশের গুলিতে এক তরুণ নিহত হওয়ার জেরে দেশব্যাপী নজীরবিহীন বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে আপাতত এই সফর স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট কার্যালয় জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শনিবার জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আলোচনায় ফ্রান্সের সবশেষ পরিস্থিতি অবহিত করেন ম্যাক্রোঁ। এ সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার পূর্ব নির্ধারিত সফর স্থগিতের অনুরোধ জানান।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট প্রতিবেশী দেশটির অবস্থা তিনি পূর্ণমাত্রায় উপলব্ধি করতে সক্ষম বলে জার্মান প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সফরের নতুন কোনো তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে পুলিশের গুলিতে তরুণের মৃত্যুকে ঘিরে বিক্ষোভে জ্বলছে ফ্রান্স। মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকালে প্যারিসের পশ্চিমে ন্যান্টা এলাকায় গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ১৭ বছর বয়সি তরুণ নাহেল এমকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। খবরে বলা হয়েছে, সড়কে পুলিশের নির্দেশ অমান্য করায় ওই কিশোরকে গুলি করা হয়।
এ ঘটনায় গত চার দিনের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দেশটিতে এক হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দাঙ্গা ও সহিংসতায় এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৫৬০টি জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ছাড়া ২৩৪টি বিল্ডিংয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বিক্ষোভ দমনে এরইমধ্যে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে ফ্রান্স সরকার। এর পাশাপাশি সাঁজোয়া যান ও নামিয়েছে দেশটি।
শুক্রবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল টিএফ ওয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরের হালনাগাদ তথ্য রাখছি।’
সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে কি না-এ প্রশ্নের উত্তরে দারমানিন বলেন, ‘একদম স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আমি বলব, আমরা কোনো সম্ভাব্য সমাধান এড়িয়ে যেতে চাইছি না। সামনের কয়েক ঘণ্টা আমরা দেখব, তারপর পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যে পন্থা বেছে নেবেন, তা কার্যকর করা হবে।’
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার আরেক শহরে কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। তো-কোয়া শহরে আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গতকাল ক্ল্যামার্ট শহরে ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।