নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঢাকা মহানগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত আমিনবাজার। রাত গভীর—২৩ জুলাই, আনুমানিক ১টা। চারদিক নিস্তব্ধ, কিন্তু ছায়ার মতো হঠাৎ উদয় হয় র্যাবের অপারেশনাল ইউনিট। নেতৃত্বে মেজর রিয়াজ, সঙ্গে রয়েছেন র্যাব সদস্য মোশাররফ, রাজীব, মিজান এবং আরও ছয় সদস্য। অভিযানের নিশানা—শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়ি (নং-৯৫৩)। পাম্পের উল্টোদিকে ওই গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৪ হাজার পিস ইয়াবা, বাংলাদেশের মাদক-যুদ্ধের এই মুহূর্তে যা ভয়াবহ বিপদের ইঙ্গিতবাহী।
ভিডিও ফুটেজে যা ধরা পড়ে তা স্পষ্ট এবং নিরাবরণ। ফয়সাল (২৫), মাদক ব্যবসার সক্রিয় সদস্য, দৃশ্যমানভাবে আটক হন। তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন র্যাব সদস্য মিজান। এভিডেন্স সংগ্রহ, চিত্র ধারণ, সবই ঘটে পেশাগত দক্ষতা ও পদ্ধতি অনুসরণ করে। সেখান পর্যন্ত ছিল অপারেশন ‘সফলতার’ প্রতিচ্ছবি।
কিন্তু এরপরই বাস্তবতা ধারণ করে ভয়ঙ্কর এক মোড়—রীতিমতো ধাক্কা খাওয়ার মতো।
মাদকদ্রব্যসহ আটক ফয়সালকে র্যাব সদস্য মিজান রাতের আঁধারে ছেড়ে দেন! এমনকি জব্দ করা হয়নি সেই পরিবহনটিও, যে গাড়িতে পাওয়া গিয়েছিল ৪ হাজার পিস ইয়াবা!
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা বলেন—“ফয়সালকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, এমনকি গাড়িটি আবার রওনা দেয়।”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক নির্ভরযোগ্য উৎস নিশ্চিত করেছে, “সরাসরি নগদ লেনদেন হয়, মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী ফয়সালকে ছেড়ে দেন অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাব সদস্য মিজান।”
এ ঘটনায় শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নয়, রাষ্ট্রীয় নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার প্রতিও গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যারা আইন প্রয়োগের নামে মাঠে নামেন, তারাই যদি অপরাধ ঢেকে দিতে ঘুষ গ্রহণে লিপ্ত হন—তাহলে কোথায় দাঁড়িয়ে দেশ? কোথায় সেই রাষ্ট্রযন্ত্র, যে ‘শুদ্ধি অভিযান’-এর নামে জনতার কাছে দায়বদ্ধ থাকার কথা বলে?
বিশ্লেষকদের ভাষায়, “এটি নিছক অপারেশন বেইলি নয়, এটি রাষ্ট্রীয় বিশ্বাস ও নিরাপত্তা কাঠামোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।”
ফয়সালের মতো মাদকচক্রের সদস্য যদি র্যাবের অভিযানেও ধরা পড়ে পরে টাকা দিয়ে মুক্ত হয়, তবে দেশের যুবসমাজ রক্ষা পাবে কীভাবে? অপরাধীরা বুঝে যাচ্ছে—আইন এখন আর ভয় নয়, বরং দর কষাকষির হাতিয়ার।
এই জঘন্য অনৈতিকতা, দায়িত্বচ্যুতি এবং রাষ্ট্রবিরোধী মানসিকতার বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত, অভিযুক্তদের প্রত্যাহার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরা।