সদা সত্য কথা বলিব
-হামিদুল আলম সখা
ধর্ম ,অধর্ম।পাপ,পূণ্য।ভালো, মন্দ।সমাজের সমস্ত মানুষ এসব ব্যাপারে ওয়াকেবহাল। তবুও একজন অন্যজনের সাথে অন্যায় করে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলমান,হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সকলের পবিত্র গ্রন্থে মানুষের ভালো দিকগুলো অনুসরণ করার জন্য বলে থাকে। মারামারি, হানাহানি না করার জন্য বারবার বলে থাকে। তবুও মানুষ অপকর্ম করে। নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নিজের চরিত্রকে জানোয়ারের রূপ দেয়। ইসলাম ধর্মে মানুষকে বলে থাকে ” আশরাফুল মাখলুকাত।” মহান আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ।তারপরও মানুষ এই কথাটি বেমালুম ভুলে যায়। ক্ষণিকের জীবন।এই আছে এই নেই।সারা দুনিয়ার মানুষ কভিড ১৯ এ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে।
ধনিক মানুষ ডাক্তারকে বলেছে যত টাকা লাগুক আমাকে বাঁচান। বাঁচতে পারেনি। তবুও মানুষ একে অন্যের শত্রু হয়। হানাহানি করে মানুষে মানুষে।এলাকা এলাকায়।দেশে দেশে।
একসময় বৃটিশকে বলা হতো বিশ্বের মোড়ল।বৃটিশের সাম্রাজ্য এতো বড় ছিল যে, বলা হতো সূর্য সেদিকে উঠে সেটা বৃটিশের কলোনী। আবার সূর্য যেখানে অস্ত যায় সেটাও বৃটিশের কলোনী।এতো বড় সাম্রাজের মোড়ল ছিল বৃটিশ।কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে থাকে তাদের সাম্রাজ্য।কলোনীগুলো একে একে স্বাধীন হতে থাকে।নব নব চেতনায় ,কৌশলে এগিয়ে যায় আমেরিকা। মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন,বস্ত্র,শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এসব সমস্যায় থাকে জর্জরিত।সেই সুযোগ নেয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো।শোষণের হাতিয়ার হিসেবে নব নব কায়দার উদ্ভাবন করে। আমেরিকার প্রশাসন এই কৌশলে এগিয়ে যায়।
আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক নির্যাতনের ইতিহাস সবার জানা। শ্রমিকের শ্রমের কোন নীতিমালা ছিল না। কারখানার মালিক শ্রমিকদের দাস বানিয়ে রাখতো। তাদের বিশ্রাম ছিল না, তাদের বিনোদন ছিল না,তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না, তাদের থাকার ভালো ব্যবস্থা ছিল না।যে কারণে শিকাগো শহরের শ্রমিকরা ফুঁসে উঠেছিল।হে মার্কেটে সমাবেশ করেছিল ঐক্যবদ্ধভাবে।পেটুয়া বাহিনীর গুলিতে শ্রমিকরা মৃত্যু বরণ করেছিল। রাজপথ হয়েছিল রক্তাক্ত হয়েছিলো। ৮ঘন্টা শ্রম দাবী শ্রমিকের পুরণ হয়েছিল।
একটি দরিদ্র দেশে যখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম না হয় তখন ধনিক দেশের নিকট হাত পাতে। এই সুযোগটাই নেয় ধনিক দেশ বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি।
বর্তমানে ধনিক দেশগুলো তাদের বশ্যতা স্বীকার না করলে অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে থাকে।এটা শোষনের নব কৌশল।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘের সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। জাতিসংঘ একটি মানবাধিকার সংস্থায় পরিণত হয়।যেখানে যুদ্ধ হয় সেখানেই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহন করে।
আমরা ইরাক- ইরান যুদ্ধ দেখেছি।আমরা দেখেছি কিভাবে একটি দেশ , জনপথ ধ্বংস হয়।শিশু হত্যা,নারী, পুরুষ হত্যা নির্বিচারে হয়েছে।ধ্বংস হয়ে বাড়িঘর,অফিস আদালত, গৃহস্থালি।
আমরা এখন দেখছি রাশিয়া – ইউক্রেন এবং ইসরাইল – ফিলিস্তিনি যুদ্ধ।ধ্বংস ছাড়া কিছু কি দেখতে পারছি?
কেন এই হানাহানি? কেন বোমার আঘাতে মৃত্যু বরণ করছে হাজার হাজার শিশু,নারী, পুরুষ।যত্নে গড়া সংসার ধ্বংস স্তূপে পরিণত হচ্ছে।এক দেশে যখন অন্য দেশের সাথে যউদ্ধএ লিপ্ত হয় তখন জাতিসংঘ এগিয়ে আসে। জাতিসংঘ কেন জোড়ালো ভূমিকা নিচ্ছে না।
ইরাক -ইরান যুদ্ধের সময় দেখেছি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতি জুম্মার নামাজের পর প্রতিবাদ করে মিছিল করেছে। ইদানিং লক্ষ্য করছি ফিলিস্তিনি গাজায় ইসরাইলের আক্রমনে মুসলমান শিশু, নারী, পুরুষ অকাতরে প্রতিদিন হাজার, হাজার মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো মুসলমান প্রতিবাদী মিছিল করছে না। আমেরিকা ইসরাইলকে সাপোর্ট করছে সেজন্যই কি? আমেরিকা এই অপকর্ম সবসময় করে।
তবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশের যেসব ধর্মীয় রাজনৈতিক দল আছে তারাও এ ব্যাপারে নির্বিকার। খুবই অবাক লাগে। আমাদের মত ও পথের ঠিকানা সঠিক নেই।দিন দিন নীতি থেকে সরে যাচ্ছে।
আমাদের শিক্ষা কি সঠিক গতিতে এগুচ্ছে না? দিন দিন অমানবিক হচ্ছি?
মানবাধিকার সংস্থা দেশী, বিদেশী অনেক আছে। তারা কি করছে?
বাংলাদেশে পুলিশ যখন এনকাউন্টারে মানুষ বা কোন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে তখন মানবাধিকার সংস্থা প্রতিবাদের ঝড় তোলে।আবার যখন পুলিশকে সাধারণ মানুষরা মারে তখন মানবাধিকার সংস্থার মুখে কুলুপ দেখা যায়।
এইসব ব্যাপারগুলো ভেবে দেখতে হবে।আসুন আমরা মানবিক হই।প্রতিটি মানুষকে সম্মান করি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক, প্রজন্মকে সুস্থ,সুন্দর পরিবেশ গড়ার জন্য এগিয়ে আসি। সমাজের বুদ্ধিজীবী, সমাজসংস্কারকবৃন্দ এগিয়ে আসলে সুস্থ সমাজ , উন্নত সমৃদ্ধ,দেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: সহ সভাপতি, ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও সাধারণ সম্পাদক , সহযোদ্ধা একাত্তর।