নিউজ ডেস্ক: মানবতা-বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়া ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কারের নির্দেশনা সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায় থেকে দেয়া হয়েছে। সংগঠন-বিরোধী কাজ করলে ভবিষ্যতেও এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সময় সংবাদকে তিনি জানান, ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এসব নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা মতোই হয়েছে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর কারাগারে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেদিন সন্ধ্যায় তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি হৃদরোগে মারা গেছেন।
তার মৃত্যুতে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় শোক প্রকাশ করেন তার ভক্ত সমর্থকরা। এমনকি দণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামির মৃত্যুতে ছাত্রলীগসহ সরকার দলীয় অনেককেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। তবে ছাত্রলীগ নেতাদের এমন পোস্ট ভালোভাবে নেয়নি সংগঠনটি। সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে পোস্ট দেয়া জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭ জন, জামালপুরে ১৮ জন এবং সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রামে তিনজন করে নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের খবর পাওয়া গেছে।
সংগঠন পরিপন্থী কাজ করার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
বুধবার (১৬ আগস্ট) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১১ নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। তারা হলেন- সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমির খন্দকার, শাহবাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ নিয়ামুল, শাহবাজপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য আজহার উদ্দিন, কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহরাফ ইসলাম, খাড়েরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দিপু মিয়া, কুটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির আহমেদ, কুটি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম হাসিব, বিনাউটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য সৈকত আলী, খাড়েরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য আসিফুল আলম, নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী মো. মমিন সরকার, আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী আমিন সুমন।
বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, সংগঠনের আদর্শের পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকায় এই ১১ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে একই অভিযোগে তৃণমূল পর্যায়ের আরও ৬ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ। তারা হলেন- আখাউড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বাইজিদ খান, আশুগঞ্জের তালশহর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ সোহান, আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফুরকান আহম্মেদ, আখাউড়া পৌর ছাত্রলীগের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি রবিন খান খাদেম, কসবার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সদস্য নাজমুল সরকার ও সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী রিয়াজ উদ্দিন খান মাইনুর।
রবিউল হোসেন রুবেল জানান, মানবতা-বিরোধী অপরাধে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ছিলেন আদালতের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী। তার মৃত্যুর পর অভিযুক্ত নেতাকর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন; যা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী। তাই তাদেরকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বহিষ্কারাদেশ চূড়ান্ত করার জন্য আমরা কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করব।
এছাড়া ১৮ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে জামালপুর জেলা ছাত্রলীগ। তারা হলেন- ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, সহ-সম্পাদক মুসা আহমেদ, ইসলামপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য মুরসালিন উদ্দিন, কর্মী মো. আব্দুল কাইয়ুম, মো. জয় মামুন, গাইবান্ধা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনির সরকার, চরপুটিমারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম, নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক, মেলান্দহ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক মো. ইউসুফ আলী, সদস্য আশরাফুল সালেহিন রিয়াদ, মেলান্দহ পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহমেদ, মেলান্দহ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান সেতু, নাংলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মো. বরকতুল্লাহ ফারাজী, হাজরাবাড়ি পৌর শাখার অন্তর্গত ১ নং ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম চৌধুরী, কুলিয়া ইউনিয়ন শাখার অন্তর্গত ২ নং ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলাম সানি ও জামালপুর সদর উপজেলার (পূর্ব) শরিফপুর ইউনিয়ন শাখার অন্তর্গত ৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইম কবির ও বকশিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শোয়েব আল হাসান এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি সাংগঠনিক থানা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম মুসা।
এ ছাড়া কেন তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার উপযুক্ত কারণসহ লিখিত জবাব আগামী ৭ দিনের মধ্যে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
একই কারণে পদ হারিয়েছেন চট্রগ্রামের লোহাগোড়া উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতা। তারা হলেন- লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গাজী আমজাদ, সহ-সভাপতি মো. তাউসিফ, উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুম।
এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. সাইফুদ্দীন আজাদ সবুজ ও মাঈনুল ইসলাম মাসুম ও সীমান্ত আদর্শ কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশিক কবির।
একজন মানবতা-বিরোধী অপরাধীর মৃত্যুতে শোক জানানোয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বহিষ্কারের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক নেতারা।