স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়োগ জালিয়াতি, দুদকের মামলা

নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনায় কমিটির সভাপতি সাবেক পরিচালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন:

(১) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম (৬০)। (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)।

(২) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আ.ফ.ম. আখতার হোসেন। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে চাকরিরত (উপপরিচালক)।
(৩) খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ (৫৮)।
(৪)  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শওকাত আলী।
 
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
 
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার লক্ষ্যে জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন হাসপাতাল/মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১২০০টি, মেডিকেল টেকনেশিয়ান ১৬৫০টি এবং ক্যার্ডিওগ্রাফারের ১৫০টি পদসহ মোট সৃজিত ৩০০০ পদের মধ্যে ২০২টি পদ বাদ দিয়ে ২৭৯৮টি শূন্যপদে জনবল নিয়োগে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
২০২০ সালের ৩০ জুন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনটি আলাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ৫ জুলাই, থেকে অনলাইন আবেদন শুরু হয় এবং ২০ জুলাই শেষ হয়। এতে মোট ৭২,৬১৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনকারী ২৩,৫২২ জনের অনুকূলে অনলাইনে টেলিটকের মাধ্যমে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়।
 
লিখিত পরীক্ষা গ্রহণে লিথোকোড সংবলিত খাতা প্রণয়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শওকাত আলী পরীক্ষার খাতা তৈরি (লিথোকোডসহ), কক্ষভিত্তিক খাতা প্যাকেট করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়োগ কমিটির কাছে পাঠায়। নিয়োগ কমিটি পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বদিন রাতে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে। এর পর লিথোকড সংবলিত খাতা, প্রশ্ন, হাজিরা শিট কেন্দ্রভিত্তিক সিলগালা করে ট্রাঙ্কে রেখে সিলগালা করেন। পরীক্ষার দিন সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতর মনোনীত কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিলগালাকৃত ট্রাঙ্ক বুঝে নিয়ে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে বুঝিয়ে দেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই নিয়োগ পরীক্ষা নিম্নলিখিত তারিখ ও সময়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
 
মেডিকেল টেকনিশিয়ান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও কার্ডিওগ্রাফার পদে নির্দিষ্ট দিন লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতর হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে খাতা, লিথোকডের ছেঁড়া অংশ এবং প্রশ্ন বুঝে নিয়ে অধিদফতরে নিয়ে আসেন এবং নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব উপপরিচালক আ.ফ.ম. আক্তার হোসেনের কাছে জমা দেন।
 
সদস্যসচিব খাতা বুঝে নিয়ে একই দিন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) সংশিষ্ট খাতা মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলীর নিকট প্রদান করেন এবং মেডিকেল টেকনিশিয়ান (অন্যান্য) পদের লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদের কাছে প্রদান করেন। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাতে কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র পুনরায় নতুন খাতায় প্রশ্ন উত্তর লিখে মো. হারুনুর রশিদ ও মো. শওকত আলীর সহযোগিতায় অফিশিয়ালি সরবরাহকৃত কিছু কিছু উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করেন।
 
টেকনেশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪৪৫৩টি খাতা, টেবুলেশন শিট ও অন্যান্য ডকুমেন্টস পরীক্ষান্তে ২৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেনসিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ২৫৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮০০ জন পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেনসিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ করা গেছে। ২৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেনসিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত সংক্রান্তে চাকরিপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তবে গোপনীয় অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চাকরিপ্রার্থীদের নিকট হতে ক্ষেত্রবিশেষে ১৫-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদানের শর্তে জালজালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *