২৩ জুন আওয়ামীলীগ এর ৭৪ তম জন্মদিন 

হামিদুল আলম সখা :১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ ধর্মীয় ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ হলো।একটি ভারত অন্যটি পাকিস্তান। পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। মূলতঃ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছিল। দুইশত বছরের  বৃটিশের গোলামীর শৃংখল থেকে মুক্তি পেয়েছিল ভারতবর্ষ।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন মাওলানা আকরাম খান ও খাজা নাজিমুদ্দিন। মুসলিম লীগের মধ্যে উদারপন্থী নেতাদের মধ্যে ছিলেন  হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেম। তারা দলের ভিতরে ছিলেন অবহেলিত।এরই এক পর্যায়ে ১৫০ নাম্বার মোঘলটুলিতে কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন এবং পরিকল্পনা করেছিলেন একটি রাজনৈতিক দলের। সেই সময় কলকাতা থেকে তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাথে যোগ দিলেন। এদিকে টাঙ্গাইলে প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করার কারণে শূণ্য হওয়া একটি উপ নির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হক। কিন্তু সরকার এ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করে।ফলে তারাও একটি নতুন দল ঘোষণার চিন্তা করেন।একটি প্রস্তুতি সভা করেন। সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান।
সেই সময় বড় কোন অডিটরিয়াম না পাওয়ায় কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ূন রশীদ এর মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা আহবান করা হয়। সেদিন ছিল ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। সেই রোজ গার্ডেনের সভায় প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দলের নামকরণের  প্রস্তাব করেন। “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ”।
সেখানে পুরো পাকিস্তানের জন্য দলের নামকরণ করেন ” নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ”। এই সংগঠনের সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
২.
এখানে উল্লেখ্য যে,১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় কর্মী সম্মেলন। সেই পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলনে গঠিত হয় গণতান্ত্রিক যুবলীগ। সেই সম্মেলনে বাংলা ভাষা বিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।সেই সময় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গাজীউল হক।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ জন্ম নেয়। সেই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের এসেম্বলি হলে এক ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়।শেখ মুজিবুর রহমান নাইম উদ্দিন কে কনভেনার করে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ গঠন করেন। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন আজিজ আহমেদ, মোহাম্মদ তোয়াহা,অলি আহাদ, আব্দুল হামিদ চৌধুরী,দবিরুল ইসলাম,নাইমউদ্দিন,মোল্লা জালাল উদ্দিন,আব্দুর রহমান চৌধুরী, আবুল মতিন খান,সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
৩.
রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবী প্রসংগ ক্রমে চলে আসে।দেশ বিভাগের পর বাঙালিরা প্রথম হোঁচট খায়। পাকিস্তানের প্রধান কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা উর্দূ করার ঘোষণা দেয়।এতে বাঙালিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।শুরু হয়  প্রতিবাদ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ১৯৪৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।আন্দোলন থেমে থাকে না।শেখ মুজিবুর রহমান এর সাথে যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তাঁরা জেলখানায় রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে অনসন ধর্মঘট করেন। শেখ মুজিবুর রহমান জেলা খানার প্রিজম সেল থেকে রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের নেতা কর্মীদের পরামর্শ দিতেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু খন্ড খন্ড মিছিল। মিছিল যখন বর্তমান শহিদ মিনারের কাছে আসে তখন সরকারের পেটোয়া বাহিনী মিছিলে গুলি করে। শহিদ হয় সালাম,রফিক,জব্বার,শফিক,বরকতসহ অনেকে। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ।ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখায় সুর দিলেন আলতাফ মাহমুদ।”আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।”
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন।যাকে হক – ভাসানীর নির্বাচন বলা হয়ে থাকে। সেই নির্বাচনে মুসলিম লীগ পরাস্থ হয়।যদিও যুক্ত ফ্রন্ট সরকার বেশি দিন টিকে না।শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন।তখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।সেই সময় দলের ভিতরে কথা উঠে শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক আবার মন্ত্রীও।শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে দলের হাল ধরেন।এরপর আইয়ুব খান এর সামরিক শাসন আসে ১৯৫৮ সালে।১৯৬২ সালে শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন হয়। ১৯৬৬ সালে  শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন এবং পূর্ব বাংলার সমস্ত থানায় ৬দফার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা হয়‌। সেই সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হন।তার সাথে তার সহযোগীরা গ্রেফতার হন।১৯৬৯ সালে এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পান। সেই সময় তোফায়েল আহমেদ ঢাকসু ভিপি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জনাকীর্ণ সভায় শেখ মুজিবুর রহমান কে “বঙ্গবন্ধু” উপাধীতে ভূষিত করা হয়।এরপর ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন।সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেলেও বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী।
অতঃপর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।”এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এরপর দীর্ঘ ৯মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জন করি বিজয়, স্বাধীনতা।
৪.
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তৎকালীন ১৯ জেলায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তারবার্তা প্রেরণ করা হয়। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়।পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু কে ফাসি দেয়ার ব্যবস্থা করে। তাঁর জেলখানার সামনে কবর খোঁড়া হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,তোমরা যদি আমাকে হত্যা করো তবে আমার লাশ আমার বাঙালিদের কাছে পাঠিয়ে দিও।
এদিকে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুর বৈদ্যনাথ তলায় মুজিব নগরে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে রাষ্ট্র্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদ কে প্রধানমন্ত্রী ও জেনারেল এম এ জি ওসমানী কে সেনাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।শপথ বিকৃত পাঠ করান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।গার্ড অফ অনার দেন খন্দকার মাহবুব এসপি। উপস্থিত ছিলেন এ এইচ এম কামারুজ্জামান,ক্যাপ্টেন মনসুর আলী,খন্দকার মোস্তাক প্রমুখ। জেনারেল ওসমানী বাংলাদেশ কে ১৩টি সেক্টরে ভাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করলেন।খুব অল্প সময়ের মধ্যে সংবিধান তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।সকলকে নিয়ে যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে সাজাতে শুরু করলেন।দেশ গঠনের জন্য পন্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহন করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক সংগঠন।অনেক চড়াই উৎরায়ের পর স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা অর্জন এর জন্য এককভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অবদান কোনদিন অস্বীকার করা যাবে না।১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ করা হয়। সেই সময় সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক, যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তখন জেলখানায় ছিলেন।১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন কমিটি করা হয়।শেখ মুজিবুর রহমান কে সভাপতি ও তাজউদ্দিন আহমদ কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আওয়ামীলীগের উত্থান পতন হয়েছে।যুগের প্রয়োজনে নেতৃত্বের রদবদল হয়েছে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী কে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হলেন।বিশ্বের বুকে পরিচিতি লাভ করলেন সমহিমায়।১৯৭৩ সালে জুলিওকুড়ি শান্তি পুরস্কার পেলেন।
৫.
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারের ৬৬৭ নাম্বার নিজ বাড়িতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র পশ্চিম পাকিস্তানের দালাল খন্দকার মোস্তাক এর নেতৃত্বে একদল তরুণ সেনাবাহিনীর সদস্যের আক্রমনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাত বরণ করেন। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যান। জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করে এবং পাকিস্তানী কায়দায় দেশ শাসন করে। রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ঘরোয়া রাজনীতি চালু করার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান হ্যা না ভোটের আয়োজন করে এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করে।১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে এবং সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩৯ টি আসন পায়। পুনরায় বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আওয়ামীলীগের পথচলা।১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন।প্রায় চার দশক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।উন্নয়ন, সমৃদ্ধি,ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত,সুখী সোনার বাংলা গঠনে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।দলের ৭৪ তম জন্মদিন পালন শুধু নয় সমস্ত মন্দাকে পিছনে ফেলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কে নিয়ে এগিয়ে চলছে দূর্বার গতিতে।১৯৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
#
সদস্য
বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ
কেন্দ্রীয় কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *