লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফার ময়দান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে আরাফাত প্রান্তর। আজ মঙ্গলবার (২৭ জুন) পবিত্র হজ, মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ মিলনমেলা। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, সাদা-কালো কোনো ভেদাভেদ নেই আজ। সব ভেদাভেদ ভুলে শুধু দুই খণ্ড সাদা কাপড় শরীরে জড়িয়ে সবাই একত্রিত হয়েছে আরাফার ময়দানে। সবার মুখেই একই ধ্বনি ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির।’

সারাবিশ্ব থেকে আজ ২৫ লাখেরও বেশি মুসলিম আরাফার ময়দানে হাজির হয়েছেন।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার বিধিনিষেধ পুরোপুরি উঠে যাওয়ায় এবার আগের বছরের তুলনায় বহু পরিমাণে বেড়েছে হজযাত্রীর সংখ্যা। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার মানুষ। আর ২০২১ সালে ৫৯ হাজার। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ মানুষই এসেছেন বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে।
আজ ৯ জিলহজ (সৌদিতে চাঁদ দেখা অনুযায়ী) মূল হজের দিন তারা আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল সমতল মাঠের দক্ষিণ দিকে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড, উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফা সীমান্ত পশ্চিমে আরও প্রায় পৌনে ১ মাইল বিস্তৃত। মুসলমানদের অতি পবিত্র এই ভূমিতে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে তারা ইবাদত করবেন; হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন। আরাফার ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে খুতবা পাঠ করবেন গ্র্যান্ড ইমাম। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফার ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তায়ালার জিকির-আসকার ইবাদতে দোয়ায় মশগুল থাকবেন। অতঃপর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারা রাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি পাথর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন।
 
মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার দিকে রওনা হবেন। ১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। এরই মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেতে উঠবেন ঈদের আনন্দে।

জিলহজের ১১ তারিখ মিনায় রাতযাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত। পরদিন ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন। আর মক্কায় পৌঁছার পর হাজিদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে, কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ি তাওয়াফ। স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ী তাওয়াফ অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেয়ার মাধ্যমে হাজিরা পবিত্র হজব্রত পালন সম্পন্ন করবেন। 

 
এদিকে গতকাল সারা দিন এবং গতরাতে হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান করেন। সেখানেই শুরু হয় পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
পবিত্র হজ উপলক্ষে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফার ময়দান, মুজদালিফা ও এর আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার। বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজ করছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন হাজি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *