লায়ন হামিদুল আলম সখা:১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রক্তপাত হীন একটি অভূত্থানের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে ২য় বারের মতো সামরিক স্বৈরশাসক ক্ষমতায় এসে জনগণের উপর ষ্টীম রোলার চালানো শুরু করে। সামরিক শাসনের অধীনে বাঙালীরা থাকতে অভ্যস্ত নয়। পূর্ব পাকিস্তানে জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করে। সেই সামরিক শাসন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদা বাঙালি ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়িয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে সপরিবারে হত্যার পর জাতির বুকে চেপে বসে স্বৈরশাসক।
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করেন।তারই পদাংক অনুসরণ করে হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ।দীর্ঘ নয়টি বছর ছাত্র সমাজ সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন করে।কখনো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আবার কখনো সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য মোর্চার মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন হয়েছে।এই দীর্ঘ আন্দোলনে জাফর জয়নাল, দীপালি সাহা, সেলিম-দেলোয়ার, রাউফুন বসুনিয়া ,আবুল ফাত্তাহ, কামাল,ওয়াহিদুল, ফিরোজ, জাহাঙ্গীরসহ অনেকের আত্মাহুতি দিয়েছিল। আমরা ৯০ এ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।
১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সূর্য সেন হল থেকে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ এর মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা তৎকালীন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাউফুন বসুনিয়া। মিছিলটি মহসিন হল পার হয়ে হলের মাঠ ঘেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কে যাওয়ার পূর্বে এফ রহমান হল থেকে গুলি আসতে শুরু করে। স্বৈরাচার এরশাদের পেটুয়া বাহিনী নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ মিছিলে গুলি করলে মিছিলে নেতৃত্বদানকারী ঝাঁকড়া চুলের বাবড়ি দোলানো তুখোড় ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনিয়া রাজপথে লুটিয়ে পড়ে।বসুনিয়ার মাথায় গুলি লাগে।রক্তে রাজপথ হয় রঞ্জিত।মিছিলের সহযোদ্ধারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করে।
রাউফুন বসুনিয়ার রক্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিচঢালা পথ রক্তাক্ত হলো।সারা বাংলা ফুঁসে উঠলো। স্বৈরশাসক খুনি এরশাদের পতনের পথ হলো প্রসারিত। কুড়িগ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বসুনিয়ার সন্তান রাউফুন বসুনিয়া লাশ হয়ে ফিরলো। রেখে গেলো অনেক স্মৃতি।আর বিপ্লবী ছাত্রসমাজের চোখে রেখে গেলো একরাশ স্বপ্ন।
সেলিম দেলোয়ার, রাউফুন বসুনিয়া,নূর হোসেন,আবুল ফাত্তাহ,কামাল, ওয়াহিদুল,ফিরোজ, জাহাঙ্গীর এর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেলো গণতন্ত্র।
রাউফুন বসুনিয়া হত্যাকান্ডকে ঘিরে আইনের ফাইল চললো কোর্ট থেকে কোর্টে। অবশেষে ফাইলটি লাল ফিতায় বন্দি হয়ে এক সময় উধাও হয়ে গেলো।
বসু, তুমি বেঁচে থাকবে বাংলায় যতদিন গণতন্ত্র থাকবে।
ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনিয়ার মৃত্যুর পর সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু লিখলেন,
“তোমার মৃত্যুতে পৃথিবীর তিন ভাগ জল
হয়ে গেছে অশ্রু
রাজপথে হয়েছে সাহসী মিছিল।”