ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রেমিক যুগলের অনৈতিক ভিডিও ভাইরাল: খাঞ্জাপুরে হামলা-অগ্নিকাণ্ড, আতঙ্কে গ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এক প্রেমিক যুগলের ব্যক্তিগত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর জেরে ভুক্তভোগী পরিবারের ওপর হামলা, মারধর ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আবুল কালাম হাওলাদারের ছেলে রাব্বি হাওলাদারকে উত্তেজিত জনতা প্রকাশ্যে মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসময় ক্ষুব্ধ জনতা আবুল কালামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। বর্তমানে পুরো পরিবার গৃহহারা হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় আবুল কালামের মেয়ে নুসরাত জাহানকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় হিন্দু পরিবারের ছেলে শুভ সেনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস হলে গ্রামের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। নুসরাতের ভাই রাব্বিকে নিয়ে কটূক্তি করা হলে তিনি প্রতিবাদ জানান। এর পরপরই হামলা ও সংঘর্ষ শুরু হয়।

ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করছে, এ ঘটনায় তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও প্রশাসন তাদের পক্ষে কোনো সুরক্ষা দেয়নি। বরং প্রতিপক্ষকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছে।

আবুল কালামের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার স্বামী অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। তিনি বহু বছর ধরে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি হিসেবে সমাজের সেবা করে আসছেন। আজ আমাদের মেয়ের কারণে আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। আমার ছেলেকে প্রায় মেরে ফেলল, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিল। অথচ প্রশাসন আমাদের পাশে না দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের মতো ছিল। আমরা কোথায় যাব?”

এক প্রতিবেশী জানান, “ঘটনার পর থেকে পুরো গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ খোলাখুলি কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, “পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।” তবে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ— প্রশাসন তাদের মৌলিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, মামলার চেষ্টা করলে আরও বড় ধরনের হামলা হওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গ্রামবাসী মনে করছে, কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ ছাড়া ভবিষ্যতে আরও সহিংসতা ঘটতে পারে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার এখন সম্পূর্ণভাবে বাস্তুচ্যুত, নিরাপত্তাহীন এবং দেশে ফেরত গেলে তাদের জীবনের ওপর গুরুতর হুমকি রয়েছে।

নিউজটি আপনার স্যোসাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *