বিনোদন ডেস্ক: ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য প্রামাণ্য চিত্রও। সিনেমাটির প্রতিটি দৃশ্যে রূপায়ণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জীবনকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ১৩ অক্টোবর (শুক্রবার) থেকে প্রেক্ষাগৃহে চলছে। সারা দেশের ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি উপভোগ করছেন দর্শকরা।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। এর নির্মাণ ব্যয় ৮৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ মোট অর্থের ৫০ কোটি ও ভারত ৩৩ কোটি টাকা দিয়েছে।
এদিকে এ সিনেমায় আরিফিন শুভ, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও জায়েদ খান অভিনয়ের জন্য মাত্র এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন।
বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন শিল্পীরা। জানিয়েছেন, এ সিনেমায় কাজ করতে পেরে তারা ধন্য।
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ প্রসঙ্গে অভিনেতা আরিফিন শুভ বলেন, ‘মুজিব সিনেমায় অভিনয় করার অভিজ্ঞতা বলে বুঝানোর মতো না। আমি মনে করি, এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ হয়ে থাকবে। এই সিনেমার পর আর এখন আমি যদি মরেও যাই তাতেও কোনো দুঃখ থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিনেমা তো মানুষের জীবন নিয়েই তৈরি হয়। কখনও কাল্পনিক ঘটনা, কখনও বাস্তব। আর এটি একটি বাস্তব গল্প। সিনেমাটি দেখে আপনারা তৃপ্তি পাবেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন।’
নুসরাত ফারিয়া বলেন, ‘আমি সৌভাগ্যবতী যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছি। এ সিনেমার পর যদি আর কোনো সিনেমা নাও করি, তাও কোনো আক্ষেপ থাকবে না। ’
ফজুলর রহমান বাবু বলেন, ‘এটি শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্র নয়- এটি একটি ইতিহাস। আমি এ ইতিহাসের অংশ হয়ে রইলাম।’
এর আগে গত বছরের ১৯ মে ফ্রান্সে ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির প্রাথমিক ট্রেলার মুক্তি পায়। আর সেন্সর বোর্ডে আনকাট ছাড়পত্র পায় চলতি বছরের ৩১ জুলাই।
সিনেমাটিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। খন্দকার মোশতাক আহমদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। কিশোর শেখ মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিব্য জ্যোতি।
এ ছাড়া রেণু (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) চরিত্রে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, শেখ হাসিনা চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, শেখ রেহানা চরিত্রে সাবিলা নূর, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমদ চরিত্রে রিয়াজ, এ কে ফজলুল হক চরিত্রে শহীদুল আলম সাচ্চু, টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খানসহ অনেকেই অভিনয় করেছেন।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), প্রার্থনা ফারদিন দীঘি (ছোট রেনু), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান) ও এলিনা (বেগম খালেদা জিয়া)।
সিনেমাটিতে ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীজা ভট্টাচার্য, রাজেন মোদি, দেবাশীষ নাহা, সোমনাথ, কৃষ্ণকলি গাঙ্গুলি, আবির সুফি, অরুণাংশু রায় প্রমুখ।
জানা যায়, এর চিত্রগ্রহণের প্রকৃত তারিখ হিসেবে নভেম্বর ২০১৯ নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পিছিয়ে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ করা হলে তাও স্থগিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতে চিত্রগ্রহণ শুরু হয় ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এর। চিত্রগ্রহণের প্রথম ধাপ ১০০ দিনের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়। আর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের দৃশ্যগুলো দ্বিতীয় ধাপে শুট করা হবে।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে চিত্রগ্রহণের কাজ একাধিকবার স্থগিতের পর ২০ নভেম্বর থেকে বেশ কিছু দৃশ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপের চিত্রগ্রহণ চলে প্রায় ৫৯ দিন।
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেছেন শামা জাইদি ও অতুল তিওয়ারি। সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ‘বিএফডিসি’ (বাংলাদেশ) ও ভারতের ‘এনএফডিসি’। এটি বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় করা হয়েছে। সিনেমাটির দৈর্ঘ ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট।
এই সিনেমার একমাত্র গান ‘অচিন মাঝি’ লিখেছেন জাহিদ আকবর। এতে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন শান্তনু মৈত্র; যিনি চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালকও। এটিই তার চলচ্চিত্রে গাওয়া প্রথম গান।
সিনেমাটির ট্রেলার প্রকাশের পর জনসাধারণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সমস্যার জন্য ট্রেলারটি সমালোচিত হয়। চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল ট্রেলারটির সমালোচনা করেন। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায় ইঙ্গিত করেন যে, সমালোচনার বিষয়টা স্বাভাবিক। গান্ধী ও জিন্নাহ চলচ্চিত্র দুটিও সমালোচনা থেকে বাঁচতে পারেনি।
ট্রেলার নিয়ে সমালোচনার জবাবে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বলেন, ‘পুরো চলচ্চিত্র না দেখে শুধুমাত্র ট্রেলার দেখে প্রতিক্রিয়া জানানো অনুচিত।’
সবশেষ ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন থেকে নিশ্চিত করা হয় যে, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর দেশটিতে মুক্তি দেয়া হবে। গত ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে বায়োপিকটির প্রিমিয়ার শো দেখেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।