যে ২ শহরে দাজ্জাল কখনোই ঢুকতে পারবে না

ধর্ম ডেস্ক: দাজ্জাল আরবি শব্দ। হাদিসের ভাষায় ‘মাসিহুদ দাজ্জাল’, প্রতারক বা মিথ্যা মাসিহ। কিয়ামতের আগে সিরিয়া ও ইরানের মধ্যবর্তী কোনো এলাকা থেকে তার আগমন ঘটবে। অসংখ্য হাদিসে নবীজি দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমার রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে তার বিষয়ে সতর্ক করছি। প্রত্যেক নবীই তার জাতিকে দাজ্জালের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তবে পূর্ববর্তী কোনো নবী তার জাতিকে যে কথা বলেননি আমি তোমাদেরকে সে কথা বলছি। তোমরা জেনে রাখ, দাজ্জাল কানা (একটি চক্ষু নষ্ট) আর আল্লাহ কানা নন। (বুখারি ২৬০৭, মুসলিম ২২৪৫, ১৬৯)

হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের বিষয়ে একটি কথা বলব যা কোনো নবী তার জাতিকে বলেননি, তা হলো, দাজ্জাল কানা। আর সে তার সাথে জান্নাত ও জাহান্নামের নমুনা নিয়ে আসবে। যাকে সে জান্নাত বলবে সেটিই জাহান্নাম।’ (মুসলিম ৪-২২৫০)
  

দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে

কিয়ামতের পূর্বে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জাল নিজেকে ‘প্রভু’ দাবি করবে। যারা তার প্রভুত্ব বিশ্বাস করতে চাইবে না, তাদের সামনে নানা কৌশল অবলম্বন করবে। সে মক্কা ও মদিনা ব্যতীত প্রত্যেক শহরে প্রবেশ করে সমগ্র বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারবে। তাকে শয়তানদের একটি বাহিনী সহায়তা করবে। তা সত্ত্বেও, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমর্থক হবে ইহুদিরা, যাদের কাছে তিনি ঈশ্বরের অবতার বলে বিবেচিত হবেন। (মুসলিম)

 
দাজ্জাল অলৌকিক কাজ করতে সক্ষম হবে, যেমন অসুস্থদের নিরাময় করা, মৃতদেরকে জীবিত করা (যদিও কেবল মাত্র যখন তার শয়তান অনুসারীদের মাধ্যমে সমর্থিত মনে করবে), পৃথিবীর গাছপালা বৃদ্ধি করা, গবাদি পশুসমৃদ্ধ হওয়া, সূর্যের চলাচল বন্ধ করে দেয়া। এসব ক্ষমতা তার থাকবে। কিয়ামতের আগে সিরিয়া ও ইরানের মধ্যবর্তী কোনো এলাকা থেকে তার আগমন ঘটবে। পৃথিবীর সকল শহরে সে নিমিষেই যাতায়াত করতে পারলেও দুটি শহরে কখনও প্রবেশ করতে পারবে না। রসুল সা. এর হাদিস থেকে বিষয়টি জানা যায়।
 
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘এমন কোনো শহর নেই, যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না, তবে মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারা ছাড়া। কেননা মক্কা ও মদিনার প্রতিটি প্রবেশপথে ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে পাহারারত থাকবেন। তারপর মদিনা শরিফ তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে। এতে সেখান থেকে সব কাফের ও মুনাফিক বের হয়ে যাবে।’ (বুখারি ১৮৮১)
 
হযরত আবু বকরা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘মদিনা মুনাওয়ারায় মাসিহ দাজ্জালের প্রভাব পড়বে না, তখন তার সাতটি প্রবেশপথ থাকবে, প্রত্যেক প্রবেশপথে দুজন করে ফেরেশতা পাহারারত থাকবেন।’ (বুখারি ১৮৭৯)
 
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার রসুলুল্লাহ সা. আমাদের দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ বর্ণনা দেন। তাতে এ কথাও বলেন যে, মদিনার প্রবেশপথে দাজ্জালের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। সেদিন একজন মানুষ যে শ্রেষ্ঠ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হবে, সে দাজ্জালের কাছে গিয়ে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি ওই দাজ্জাল, যার ব্যাপারে আমাদের রসুলুল্লাহ সা. সাবধান করেছেন। দাজ্জাল তার সঙ্গীদের বলবে, আমি যদি তাকে হত্যা করে আবার জীবিত করতে পারি, তবে কি তোমরা আমার প্রভুত্বে সন্দেহ করবে? তারা বলবে, না। তখন সে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে আবার জীবিত করবে। ওই ব্যক্তি বলবে, আল্লাহর কসম! আমি এখন আরো নিশ্চিত হলাম যে তুমি দাজ্জাল। তখন দাজ্জাল বলবে, তাকে আমি হত্যা করব। কিন্তু সে আর তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।’ (বুখারি ১৮৮২)
  

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচতে নবীজির শেখানো দোয়া

 

রসুলুল্লাহ সা. দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য ফরজ, নফল বা সুন্নত, যেকোনো নামাজে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দুয়া পড়তে বলেছেন। اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন আ’যাবিল ক্বাবরি ওয়া মিন আ’যাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ’ইয়া, ওয়াল্ মামাতি, ওয়ামিং সাররি ফিতনাতিল্ মাসিহিদ-দাজ্জাল। অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আযাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আযাব, এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো। দোয়ার মধ্যেও পড়া যাবে এটি।
সুরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করা: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা পাবে।’ অন্য এক হাদিসে আছে, ‘সুরা কাহফের শেষ দশ আয়াত।’ (মুসলিম ১০২১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *