হামিদুল আলম সখা
দৈনিক পত্রিকায় , ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে বা টিভি টকশোতে বক্তাগণ হরহামেশা বলছেন “একতরফা নির্বাচন” সরকার করতে চায়। প্রধান প্রধান বিরোধীদল যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করে তা হলেই একতরফা হবে।
বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে সংবিধান মোতাবেক। নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে যে রাজনৈতিক দল জয়লাভ করে তারা সরকার গঠন করে জাতীয় সংসদে বসে এবং ৫বৎসরের জন্য দেশ পরিচালনা করে।
সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে সরকার।সেই নির্বাচন কমিশন অবাধ , সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়। নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনায় বসে। রাজনৈতিক দলের কোনো কোনো পরামর্শ নির্বাচন কমিশন গ্রহন করে।তারপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই,প্রত্যাহার,প্রতীক বরাদ্দ অতঃপর নির্বাচন।নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন করবে।এটাই নিয়ম।
বর্তমানে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আবার সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।এ কথা স্বীকার্য যে, বাংলাদেশের দুটি বড় দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি।যে কারণে সকলেই বলে থাকেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সেটা অর্থকরী নির্বাচন হয় না বা বলা হয় একতরফা নির্বাচন।একটি নির্বাচনী আসনে একের অধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দিতে বাধ্য।আর একটি আসনে সরকারীদল,অন্যান্য দল,সতন্ত্র মিলে যদি ৫ জন প্রার্থী থাকে তবে তাকে কি অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন বলা যাবে না? বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। তারা সংবিধান মোতাবেক অবাধ,সুষ্ঠ , নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী আব্দুল আউয়াল নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন।সে মোতাবেক আগামি ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এখন কোন একটি দল যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করে তবে নির্বাচন কমিশনের কি করার আছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছেন। তফসিল অনুযায়ী আগামি ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল এর দিন নির্ধারণ করেছেন।দলীয়ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সহ নির্বাচনমুখী দলগুলো ৩০০ আসনে সংসদ সদস্য নির্ধারণ করার জন্য বৈঠক এবং মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে। নির্বাচন এলেই জনগণের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। এবারেও তার কমতি নেই। বিএনপি সহ কিছু দল নির্বাচনের বিরোধিতা করছে।তারা চায় বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।যার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন হবে।কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের এ দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে।বলেছে বিএনপির এ দাবি অযৌক্তিক।
এদিকে, আমেরিকার বাংলাদেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণ মূলক চায়।
বর্তমান সরকার এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোন বন্ধু রাষ্ট্র আমাদের নির্বাচন সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারে কিন্তু আদেশ করতে পারেনা।যদি হস্তক্ষেপ করে তবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানবে। সুতরাং কোন বন্ধু রাষ্ট্রের এ হেন পরামর্শ বা আদেশ বর্তমান সরকার মেনে নেবে না।
যে বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম সেই প্রসংগ দিয়ে শেষ টানতে চাই। নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচন করছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।যারা এ অভিযোগ করে অবরোধ,হরতাল করছেন তাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন নি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ভিতর থেকেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছেন।এখন তফসিল মোতাবেক কে নির্বাচন করবে,কে করবে না এ বিষয়ে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এর উপর বর্তায় না।হ্যা, যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে চান না তারা অনেক যুক্তি দেখাবেন কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক দল আছে নির্বাচন করবে।একটি আসনে যদি কমপক্ষে ৫ জন প্রার্থী থাকে তাহলেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে পারেন।
সুতরাং নির্বাচন কমিশন কে একতরফা নির্বাচন করছে বলা যায় না। নির্বাচন কমিশন এর সহযোগিতা করবে পুলিশ,জেলা প্রশাসন,শিক্ষক,ব্যাংকার।এছাড়া বর্ডার গার্ড, আর্মি প্রমুখ।এটা একটা বিরাট আয়োজন।আর এতে যারা বাধা দিবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
সুতরাং সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য আহ্বান জানিয়ে শেষ কথা বলতে চাই আসুন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অর্থবহ করে তুলি।
লেখক:হামিদুল আলম সখা
সাধারণ সম্পাদক, সহযোদ্ধা একাত্তর
ও
সহ সভাপতি, ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদ।