দ্বিগুণ আমদানি, তবুও কোরবানির আগে লাগামহীন মসলার বাজার

নিউজ ডেস্ক: চাহিদার বিপরীতে দ্বিগুণ আমদানির পরও কোরবানির ঈদের আগেই অস্থির হয়ে ওঠেছে দেশের গরম মসলার বাজার। লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, গোলমরিচ এবং রসুনের মতো মসলার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে কেজিতে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের পাশাপাশি দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিদিনই ট্রাকে করে আসছে আমদানি করা মসলা।

দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের একটি মার্কেটে মঙ্গলবার (২৩ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, আমদানি করা জিরার বস্তা স্তূপ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এ চিত্র এখানকার সব পাইকারি দোকানেই।

চলতি মে মাসের প্রথম ২০ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪১৪.৩৭ টন ঝিরা আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮০.৯৫ টন। অথচ সংকট দেখিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জিরার দাম বাড়ানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানিকে সামনে রেখে জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৩৮ টন দারুচিনি, ৪২৩ টন লবঙ্গ, ৮৫৮ টন এলাচ, ১ হাজার ২৫৩ টন জিরা, ১০৬ টন জয়ত্রী এবং ৪৯৩ টন গোলমরিচ আমদানি হয়েছে।

অবশ্য গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জিরা এবং এলাচ কিছুটা কম আমদানি হলেও দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করে সেই সংকট সামাল দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, লবঙ্গ ৩০ শতাংশ, মরিচ ১১ শতাংশ ও রসুনের আমদানি ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।

 
 
চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি হলেও কোরবানির আগেই মসলার দাম লাগামহীন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে লবঙ্গ ৮০ টাকা, এলাচ ৫০ টাকা, গোলমরিচ ৬০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দারুচিনি ৩১৫ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪৮০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৪৫০ টাকা, জিরা ৭৫৫ টাকা, জয়ত্রী ৩ হাজার টাকা ও গোল মরিচ ৬৬০ টাকা। 
 
গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দারুচিনির দাম একই থাকলেও লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৪০০ টাকা ও গোল মরিচ ৬০০ টাকা ছিল। আর ঝিরা কয়েক সপ্তাহে কেজিতে অন্তত দেড়শ টাকা বাড়ার পর এখন ৭৫৫ টাকায় স্থির হয়েছে।
  

মসলার বাজার দর

 

তবে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে আমদানি করা মসলা গুদামে মজুত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলেও ব্যবসায়ীরা তা অস্বীকার করছেন। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের মালিক নূরুল আজিম রনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্যগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে বিধায় সংকট দেখা দিয়েছে।
 
 
মসলার দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের কোনো ঘাটতি নেই। এক্ষেত্রে রফতানিকারক দেশগুলোর মসলা উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত যেমন দেয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকটে এলসি বা ঋণপত্র খোলার জটিলতা। বাংলাদেশ মসলা ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট অমর কান্তি দাস বলেন, ‘ভারত, আফগানিস্তান ও ইরানে জিরার ফলন কম হয়েছে। ফলে পণ্য ঘাটতির কারণে দাম যে কোনো সময় বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমদানিকারকের কোনো দোষ নেই।’  

 

এদিকে, চলতি মাসের ২০ মে পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৩ হাজার ৩১২ টন রসুন আমদানি হয়েছে; গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৮ হাজার ৩৫৫ টন বেশি। তারপরেও রসুনের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা।
 
ডলার সংকটে এলসি খুলতে জটিলতা হওয়ায় গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মসলা আমদানি একেবারেই কমে গিয়েছিল। তবে ডলার সংকট কেটে যাওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলা আমদানি হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি স্থলবন্দরগুলো দিয়েও মসলা আমদানি হচ্ছে। তারপরও দাম কমছে না মসলার। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *