আব্দুল হালিম, বিশেষ প্রতিবেদক।।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৯৮ লাখ টাকায়। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে প্রায় আট কোটি ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা তিন হাজার ৩৪৬ সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৫২টি বিলাসবহুল গাড়ি ছাড় করার আগেই শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেওয়ার কারণে ওসব গাড়ি বিক্রি করে শুল্ককর আদায় করবে চলতি সরকার।
২৮ আগস্ট বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বন্দরে আটকে পড়া সাবেক এমপিদের আমদানি করা শুল্কমুক্ত গাড়িগুলো ফেরত পাঠানো হবে না। এগুলো ফেরত পাঠালে বাংলাদেশ রাজস্ব হারাবে।
সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এসব গাড়ির বেশিরভাগই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো। সহজ শর্তে বাজারমূল্যে এসব গাড়ি বিক্রি করতে এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টা।
মুলত পণ্য আমদানি ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এ সভার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে এফসিসিআইয়ের প্রতিনিধি, আমদানিকারক, ট্যারিফ কমিশন, এনবিআর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৫২টি গাড়ির আমদানিমূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। শুল্কসহ প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ১০ কোটি টাকার বেশি। উপদেষ্টা জানান, এ মুহূর্তে রাজস্ব দরকার আছে। গাড়িগুলো বিক্রি করা হলে অনেক রাজস্ব আয় হবে। ফলে বাজারমূল্যে নির্ধারিত শুল্ক দিয়ে গাড়িগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি অনেকে এসব গাড়ি কিনতে সাহস পাবেন না। তবে এক্ষেত্রে বিক্রির জন্য কিছু শর্ত সহজ করতে হবে। তাহলে এসব গাড়ি বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের ৫২টি গাড়ি বন্দরে এসে পৌঁছেছে। আরও কিছু গাড়ি আমদানি পর্যায়ে রয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্কমুক্ত সুবিধার কাগজপত্র দিয়ে এসব গাড়ি আনা হলেও সংসদ ভেঙে দেওয়ায় আর সে সুবিধা পাওয়া যাবে না। এখন স্বাভাবিক শুল্ক-কর দিয়ে গাড়িগুলো খালাস করতে হবে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৯৮ লাখ টাকায়। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে প্রায় আট কোটি ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা তিন হাজার ৩৪৬ সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব গাড়ি আমদানি করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এছাড়া চিত্রনায়ক ফেরদৌস, সিরাজগঞ্জের জান্নাত আরা হেনরি এবং বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরও এ তালিকায় আছেন। সংরক্ষিত আসনে সদস্যদের মধ্যে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন তারানা হালিমসহ কয়েকজন।